
সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত
আল্লাহ তায়ালা দুনয়াতে যত নেয়ামত দিয়াছেন তার মধ্যে সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত কেননা একটি প্রবাদ আছে সাস্থই সুখের মূল। এক্ষেত্রে সচেতন না হলে অনেক মূল্যবান জিনিষের সঠিক মূল্যায়ন হবে না।
আর যে বিষয়টিকে মূল্য দেয়া উচিত, সময়মতো এর মূল্য দিতে না পারলে পরিণতি হয় দুঃখ ও দূর্দশার। এ জন্য হাতের নাগালে থাকা মহা মূল্যবান বিষয় সম্পর্কে সজাগ-সচেতন হওয়া একান্ত কর্তব্য ও দায়িত্য।
যেমন কোরআনে বর্ণিত রয়েছে:
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের উপর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, যাতে তোমাদের কে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন, যা তোমাদেরকে দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তি দাতা এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু। সুরা আন’য়াম আয়াত : ১৬৫
এখানে তিনি তোমাদেরকে যা প্রদান করেছেন এর অর্থ দরিদ্রতা-ধনাঢ্যতা, জ্ঞান-অজ্ঞতা এবং সুস্থতা-অসুস্থতা যাকে যা কিছু দিয়েছেন, তাতেই তার জন্য রয়েছে পরীক্ষা।
রাসূল তাঁর উম্মতকে এ বিষয়ে সচেতন করেছেন সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত
হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন।
মানুষকে আল্লাহ যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলোর সঠিক ও যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নতি ও সফলতা অর্জন করা সম্ভব,
আর তার অন্যথা হলে অবনতি ও ব্যর্থতা এই সহজ সত্যটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের সামনে তুলে ধরেছেন।
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ…قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ
الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ،
فَمَنِ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيِنِهِ وَعِرْضِهِ،
وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ
يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى، يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ
أَلاَ وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، أَلاَ إِنَّ حِمَى اللَّهِ فِي أَرْضِهِ مَحَارِمُهُ
أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ
وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ. أَلاَ وَهِيَ الْقَلْبُ ”.
নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে,
‘হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানেনা।
যে ব্যাক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে।
আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, উদহারন সে রাখালের ন্যায়,
যে তার পশু বাদশাহ্র সংরক্ষিত চারণভুমির আশে পাশে চরায়, অচিরেই সেগুলো সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে।
জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহ্রই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হল তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ।
জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়।
আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব।
কলব বা অন্তরই দেহের আসল বস্তু।
এ হাদীসে একটি উল্লেখযোগ্য ও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্ত যোগ হয়েছে। দৃষ্টান্তটির সারাংশ এই যে, আরবগণ তাদের গবাদি পশুর জন্য নির্দিষ্ট চারণভূমি সংরক্ষণ করত।
অনুমতি ছাড়া অন্য কোন অননুমোদিত রাখাল তাতে গবাদি পশু চরালে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল।
শাস্তির ভয়ে সতর্ক সাধারণ রাখালগণ সেই সংরক্ষিত চারণভূমি হতে দূরে রেখে তাদের গবাদি পশু চরাত। ফলে তাদের পশু সংরক্ষিত চারণভূমিতে প্রবেশ করতে পারত না বলে তারা নিরাপদে থাকত।
অসতর্ক সাধারণ রাখালেরা দুঃসাহস করে কোন পশু সংরক্ষিত চারণভূমিতে প্রবেশ করার ফলে তারা ঘোষিত শাস্তি হতে নিরাপদ থাকতে পারত না।
এই দৃষ্টান্তের প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ হলো প্রকৃত জগৎ-পাল আর তাঁর সংরক্ষিত চারণভূমি হলো তাঁর নিষেধাবলী।
সেই নিষেধাবলী হতে সতর্কতার সাথে অবস্থান না করলে তাতে পতিত হয়ে শাস্তি প্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বিরাজমান।
হাদীসের শেষাংশে কলব বা অন্তরের গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
‘কলব’ এজন্যই বলা হয় যেহেতু তাতে বিভিন্ন প্রকার রূপ পরিবর্তন অত্যন্ত স্বাভাবিক। এ কলব বা অন্তরই দেহের আসল বস্তু। অন্তরের সুস্থতার উপর দেহের সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভরশীল।
আর অন্তরের পীড়া সহজেই দেহকে পীড়িতরূপে পতিত করে। হাদিসের এ অংশে অন্তরের মর্যাদার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে
এবং অন্তরকে নির্মল, স্বচ্ছ, সুস্থ ও মোহমুক্ত রাখার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
অবকাশ ও সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত
আরো এক হাদিসে এ ধরনের দু’টি নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে তিনি ইরশাদ করেছেন:
عَنِ ابنِ عباسٍ – رضي اللهُ عنهما – قال: قال رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم: « نِعمَتانِ مغبونٌ فيهما كثيرٌ من الناسِ: الصَّحَّةُ والفَّراغُ
‘দু’টি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। (অর্থাৎ এ দু’টি নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণে তারা কল্যাণবঞ্চিত)। নিয়ামত দু’টি হলো ‘সুস্থতা’ ও ‘অবকাশ’।
এ দু’টি বিষয় আল্লাহর তাআলার কত বড় দান তা খুব ভালোভাবে বুঝে আসে যখন এগুলো হারিয়ে যায়। অসুস্থ মানুষের পক্ষে সুস্থতার মাহাত্ম্য বোঝা সহজ।
আর নানা অবাঞ্ছিত ঝামেলায় জর্জরিত হলে তখনই বুঝে আসে সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত এবং অবকাশের মূল্য। কিন্তু তখন বুঝে এলেও কিছু করার থাকে না। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُواْ نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ
وَأَوْفُواْ بِعَهْدِي أُوفِ بِعَهْدِكُمْ وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ
হে বনী-ইসরাঈলগ ণ, তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি
এবং তোমরা পূরণ কর আমার সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা, তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আর ভয় কর আমাকেই। সুরা বাকারা আয়াত : ৪০
কোরআনে আরো বর্ণিত রয়েছে;
ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ
এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সুরা তাকাসুর আয়াত : ৮
অর্থাৎ তোমরা সবাই কেয়ামতের দিন আল্লাহ-প্রদত্ত নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে যে, সেগুলোর শোকর আদায় করেছ কি না,
সেগুলোতে আল্লাহর হক আদায় করেছ কি না; নাকি পাপকাজে ব্যয় করেছ? এতে সকল প্রকার নেয়ামত এসে যায়।
নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।
কুরআন ও হাদীসের অন্যত্র এরকম কিছু নেয়ামতের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে এভাবে করা হয়েছে:
وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولـئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। সুরা বনী-ইসরাঈল আয়াত : ৩৬
এতে মানুষের শ্রবণশক্তি দৃষ্টিশক্তি ও হৃদয় সম্পর্কিত লাখো নেয়ামত অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যেগুলো সে প্রতি মুহুর্তে ব্যবহার করে।
হাদিসে এসেছে- কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তা হলো, আমি কি তোমাকে একটি সুস্থ দেহ দেইনি?
তোমাকে কি ঠান্ডা পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করিনি? অর্থাৎ এই নিয়ামত গ্রহণ করে তোমার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ? এই প্রশ্নের উত্তর মানুষকে দিতে হবে।
عَنْ أَبَي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
إِنَّ أَوَّلَ مَا يُسْأَلُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -يَعْنِي الْعَبْدَ- مِنْ النَّعِيمِ
أَنْ يُقَالَ لَهُ: أَلَمْ نُصِحَّ لَكَ جِسْمَكَ، وَنُرْوِيَكَ مِنْ الْمَاءِ الْبَارِدِ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, -অর্থাৎ বান্দাকে- তা হচ্ছে নিয়ামত,
তাকে বলা হবে যে: আমি কি তোমার শরীর সুস্থ করিনি, আমি কি তোমাকে ঠাণ্ডা পানি পান করাই নি
ঐ সকল নেওয়ামত এর জবাবদিহিতা করতে।
জীবনের অবস্থা যতই কঠিন হক না কেন তারপরে ও আল্লাহর কাছে আমাদের ঐ সকল নেওয়ামত এর জবাবদিহিতা করতে হবে যা আমারা আমাদের জীবনে ভোগ করেছি। যেমন হাদিসে এসেছে:
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ…عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ
خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ لَيْلَةٍ
فَإِذَا هُوَ بِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقَالَ ” مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُمَا هَذِهِ السَّاعَةَ ” . قَالاَ الْجُوعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ
. قَالَ ” وَأَنَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لأَخْرَجَنِي الَّذِي أَخْرَجَكُمَا
قُومُوا ” . فَقَامُوا مَعَهُ فَأَتَى رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ فَإِذَا هُوَ لَيْسَ فِي بَيْتِهِ
فَلَمَّا رَأَتْهُ الْمَرْأَةُ قَالَتْ مَرْحَبًا وَأَهْلاً . فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَيْنَ فُلاَنٌ
. قَالَتْ ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا مِنَ الْمَاءِ
إِذْ جَاءَ الأَنْصَارِيُّ فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَصَاحِبَيْهِ
ثُمَّ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أَكْرَمَ أَضْيَافًا مِنِّي – قَالَ – فَانْطَلَقَ فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ
فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ كُلُوا مِنْ هَذِهِ . وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ
فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” إِيَّاكَ وَالْحَلُوبَ ”
فَذَبَحَ لَهُمْ فَأَكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ الْعِذْقِ وَشَرِبُوا
فَلَمَّا أَنْ شَبِعُوا وَرَوُوا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أَصَابَكُمْ هَذَا النَّعِيمُ .
অর্থ:
আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক দিনে কিংবা রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার বাড়ী থেকে) বের হয়ে আবূ বাকর (রাযিঃ) ও উমার (রাযিঃ) কে দর্শন করলেন।
তিনি প্রশ্ন করলেন, এ সময় কিসে তোমাদের গৃহ হতে বের করেছে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! উপবাসের যন্ত্রণায়।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে মহান আল্লাহর হাতে আমার জীবন, তার কসম, যা তোমাদের বের করে এনেছে, আমাকেও তা-ই বের করে এনেছে,
চলো। তারা উভয়ে তার সাথে চলতে লাগলেন। তারপর তিনি এক আনসারীর গৃহে এলেন তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না।
তার সহধর্মিণী তাকে (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখে বলল, মারহাবা ওয়া আহলান مَرْحَبًا وَأَهْلاً রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন,
অমুক কোথায়? স্ত্রীলোকটি বলল, তিনি আমাদের জন্য মিষ্ট পানি আনতে গেছেন।
তখনই আনসারী ব্যক্তিটি উপস্থিত হয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার দু’ সাথীকে দেখতে পেয়ে বললেন,
আল্লাহর প্রশংসা, আজ মেহমানের দিক হতে আমার থেকে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। তারপর সে গিয়ে একটি খেজুরের ছড়া নিয়ে আসলেন।
তাতে কাঁচা, পাকা ও শুকনা খেজুর ছিল। তিনি বললেন, আপনার এ ছড়া থেকে খান। এরপর তিনি ছুরি নিলেন (ছাগল যাবাহ করার জন্য)
তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, সাবধান, দুধওয়ালা বকরী যাবাহ করবে না।
অতঃপর তাদের জন্য (বকরী) যাবাহ করলে তারা বকরীর গোশত ও কাঁদির খেজুর খেলেন এবং (মিঠা) পানি পান করলেন।
তারা সকলে ক্ষুধা মিটালেন ও পরিতৃপ্ত হলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবূ বাকর ও উমর (রাযিঃ) কে কেন্দ্র করে বললেনঃ
যে সত্তার হাতে আমার জীবন, তার কসম! কিয়ামতের দিন এ নি’আমাত সম্বন্ধে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।
ক্ষুধা তোমাদের বাড়ি হতে বের করে এনেছে অথচ তোমরা এ নি’আমাত লাভ না করে ফিরে যাওনি।
নিজের সত্তায় রয়েছে সৃষ্টিকর্তার পরিচয়।
একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম শরীর আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এ শরীর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন তাঁর অসীম কুদরতের মাধ্যমে।
এক ঘনান্ধকার স্থানে, মাতৃজঠরে। মহাকুশলী আল্লাহ এমনই নিপুণতায় মানবদেহ সৃষ্টি করেছেন, যতই মানুষ তা চিন্তা করে ততই অভিভূত হয়।
মানুষের নিজের সত্তায় রয়েছে সৃষ্টিকর্তার পরিচয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
وَفِي الْأَرْضِ آيَاتٌ لِّلْمُوقِنِينَ
বিশ্বাসকারীদের জন্যে পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে, সুরা যারিয়া’ত আয়াত : ২০
وَفِي أَنفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না? সুরা যারিয়া’ত আয়াত : ২১
وَفِي السَّمَاء رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ
আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সবকিছু। সুরা যারিয়া’ত আয়াত : ২২
فَوَرَبِّ السَّمَاء وَالْأَرْضِ إِنَّهُ لَحَقٌّ مِّثْلَ مَا أَنَّكُمْ تَنطِقُونَ
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তার কসম, তোমাদের কথাবার্তার মতই এটা সত্য। সুরা যারিয়া’ত আয়াত : ২৩
আল্লাহর পরিচয়, তাঁর জ্ঞান ও কুশলতার পরিচয় লাভের এত সহজ উপায় বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও যদি আল্লাহর সঙ্গে পরিচিত না হওয়া যায় তবে এর চেয়ে বড় বঞ্চনা আর কী হতে পারে!
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ
وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে।
তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে।
আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। সুরা ইমরান আয়াত : ১৮৫
সুস্থতা যেমন আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শন তেমনি ভাবে সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত ও। যার হিসাব নেবেন আল্লাহ কিয়ামতের দিন।
সুতরাং আমাদের উচিত সুস্থ থাকাবস্থায় তা পরিপূর্ণ কাজে লাগিয়ে আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমিন।