
ধর্ষণ নির্মূলে করণীয় কি
আমাদের দেশে ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যধিতে রুপান্তরিত হয়েছে। তাই আজ আমরা ধর্ষণ নির্মূলে করণীয় কি এবং কার কি কর্তব্য রয়েছে তা নিয়ে কোরআন ও হাদিসে থেকে আলচনা করার চেষ্টা করব। ইনশা-আল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করন:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।
এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। সুরা আহযাব আয়াত : ৫৯
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدٍ…عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: لَمَّا نَزَلَتْ:
(يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ) [الأحزاب: ٥٩]،
خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ
كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانَ مِنَ الأَكْسِيَةِ
উম্মু সালামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ ‘‘হে নবী! আপনার স্ত্রী-কন্যাদেরকে এবং অন্যান্য মু‘মিন নারীদেরকে বলুন,
তারা যেন নিজেদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়…’’ (সূরা আল-আহযাবঃ ৫৯)।
তখন থেকে আনসার মহিলারা তাদের মাথায় এমন চাদর জড়িয়ে বের হতেন,
(চাঁদর কালো বর্ণের হওয়ায়) মনে হতো তাতে যেন কাক বসে আছে।
কোরআনে ধর্ষণ নির্মূলে করণীয় কি এর ব্যপারে আল্লাহ বলেন তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে উত্তেজিত করব
لَئِن لَّمْ يَنتَهِ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَالْمُرْجِفُونَ فِي الْمَدِينَةِ
لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ
ثُمَّ لَا يُجَاوِرُونَكَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلًا
মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং মদীনায় গুজব রটনাকারীরা যদি বিরত না হয়,
তবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে উত্তেজিত করব।
অতঃপর এই শহরে আপনার প্রতিবেশী অল্পই থাকবে। সুরা আহযাব আয়াত : ৬০
একই সূরার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়াল বলেন, তোমাদের গৃহে অবস্থান করবে (শান্তভাবে), (বাহিরে) সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না, যেমন প্রদর্শন করতে পূর্বে অজ্ঞতার যুগে।
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ
وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতার যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।
নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে।
হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে
এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। সুরা আহযাব আয়াত : ৩৩
তারা লুঙ্গি বা এ জাতীয় জামা ছিঁড়ে ওড়না বানিয়ে নেন
হাদিসে ইরশাদ রয়েছে:
حَدَّثَنَا أَبُو كَامِلٍ…عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّهَا ذَكَرَتْ نِسَاءَ الْأَنْصَارِ، فَأَثْنَتْ عَلَيْهِنَّ، وَقَالَتْ لَهُنَّ مَعْرُوفًا
وَقَالَتْ: لَمَّا نَزَلَتْ سُورَةُ النُّورِ عَمِدْنَ إِلَى حُجُورٍ – أَوْ حُجُوزٍ
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি আনসার মহিলাদের আলোচনা প্রসঙ্গে তাদের প্রশংসা করেন এবং তাদের সম্পর্কে উত্তম মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, সূরা আন-নূর যখন অবতীর্ণ হয়, তখন তারা লুঙ্গি বা এ জাতীয় জামা ছিঁড়ে ওড়না বানিয়ে নেন।
এখন প্রশ্ন হবে আমরা যদি কোরআন ও হাদিস অনযায়ী নারীদেরকে বোরকা পারায় তাহলে তারা নিরাপদ হয়ে যাবে?
এ প্রসঙ্গে আরব বিশ্বের সমকালীন সকল ‘আলিম ও মুফতীদের মতও এই যে, মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডলে ঢাকা একান্ত আবশ্যক। তাদের মধ্যে শায়খ
‘আবদুর রহমান ইবন সা‘দী, মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আল আশ্ শায়খ, ও আরো অনেকের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
এর সরল উত্তর হলো, ধর্ষিতা কিংবা বোরকা পরিহিতা মেয়েটি নয়, বরং নরাধম ধর্ষকের উম্মাদনা এবং পশুত্ব জাগ্রত করতে ভূমিকা রেখেছে
অনলাইন বা অফলাইনে প্রদর্শিত নারীদেহের খোলামেলা কিংবা যৌন আবেদনময় দৃশ্য।
যাদের ব্যাপারে নবী করিম (সা.) বলেন:
তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের গন্ধও পাবে না
حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ…عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ
يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ
رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا
وَإِنَّ رِيحَهَا لَتُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا ” .
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
দু প্রকার লোক জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে দেখিনি। এক প্রকার ঐ সব লোক যাদের কাছে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি থাকবে।
তারা এর দ্বারা লোকেদের পিটাবে। দ্বিতীয় প্রকার ঐ শ্রেণীর মহিলা, যারা কাপড় পরিহিতা কিন্তু উলঙ্গ প্রায়, মানুষকে আকৃষ্টকারিণী ও স্বয়ং বিচ্যুত।
যাদের মাথার খোপা বুখতী উটের পিঠের উঁচু কুজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের গন্ধও পাবে না।
অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়।
সুতরাং ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতার পোশাক দায়ী নয়, দায়ী ধর্ষণের মনোবৃত্তি তৈরি করতে সহায়ক সংস্কৃতি; যেখানে নারীকে পণ্য ও কেবল ভোগ্য বস্তু হিসেবে দেখানো হয়।
সেই সাথে ভোগবাদী দর্শনের প্রভাব, পুরুষের আত্মসংযমের ঘাটতি এবং যথাযথ শাস্তিমূলক আইন ও তার প্রয়োগের অভাব ইত্যাদিও ধর্ষণ বৃদ্ধির মৌলিক কারণ।
কোরআনে ব্যভিচারের কঠিন নিন্দা করেন
আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে ব্যভিচারের কঠিন নিন্দা করেন। তিনি বলেন, তোমরা যিনা তথা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না:
وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। সুরা বনী-ইসরাঈল আয়াত : ৩২
চুরি থেকে রক্ষা পেতে মানুষ তালার ব্যবস্থা করে। কেউ তালা মারার পরও চুরি হলে কি এ কথা বলা যাবে- তালা মেরে কি লাভ? তালাও তো রক্ষা করতে পারে না?
পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা অবাধ নারীদেহ প্রদর্শন- ধর্ষণের জন্য কোনো একটিই এককভাবে দায়ী নয়। পুরুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নৈতিক শিক্ষা
এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও নারীর সংযমী লাইফস্টাইল- উভয়মুখী প্রচেষ্টায়ই কেবল ধর্ষণ কমাতে পারে।
এ ব্যাপারে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِئَةَ جَلْدَةٍ
وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ
ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর।
আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক।
মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। সুরা নুর আয়াত : ২
গণধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাবলীর কারণ ক্ষমতার দাপট
যারা মনে করছেন কেবল পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই ধর্ষণ বন্ধের জন্য যথেষ্ঠ, তারা কি পৃথিবিতে এমন কোনো সমাজ দেখাতে পারবেন
যেখানে মেয়েদের খোলামেলা চলাফেরা সত্বেও পুরুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, ফলে ধর্ষণ নাই বা নিয়ন্ত্রিত?
তথাপি সাম্প্রতিক সময়ে; বরং সব সময় চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাবলীর কারণ ক্ষমতার দাপট। সুতরাং দলীয় দাপট ও গুন্ডামী কঠোরভাবে বন্ধ করা না গেলে এগুলো থামবে না।
তবে মূল ও স্থায়ী সমাধানের জন্য ইসলামী লাইফস্টাইল, কালচার ও আইনেই ফিরে যেতে হবে। তার কোনো বিকল্প নাই।
وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا
এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। সুরা ফুরকান আয়াত : ৬৮
ধর্ষকের পাশাপাশি তাদেরও বিচার করা উচিত যারা নারীকে পণ্য ও ভোগ্যবস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে। ইসলামী লাইফস্টাইল ও সংস্কৃতি চর্চা এবং ধর্ষণের বিচারে শরিয়া আইন কার্যকর করা হলো
এ সমস্যার মূল ও স্থায়ী সমাধান। অন্যথায় ধর্ষণ বন্ধ করতে এক জায়গায় বাঁধ দিলে সাময়ীকের জন্য বন্ধ হলেও কিছু সময় পর অন্য জায়গা থেকে ঠিকই লিক করবে।