
দোয়া কবুলের শর্ত সমূহ।
কোরআন ও হাদিস থেকে দোয়া কবুলের শর্ত সমূহের মধ্যে যা পাওয়া যায় তার মধ্যে প্রধান তিনটি শর্ত রয়েছে। যথা (১) ঈমান (২) ইখলাস বা আন্তরিকতা (৩) সুন্নাত পদ্ধতিতে আমল।
সুতরাং *ঈমানহীন কাফির মুশরিকের আমল, *ইখলাস বিহীন লোক প্রদর্শনকারীর আমল এবং *সুন্নাত পদ্ধতি পরিত্যাগ করে নিজের ইচ্ছামতো ইবাদতকারীর কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلاَئِكَةِ اسْجُدُواْ لآدَمَ فَسَجَدُواْ إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো।
সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। সুরা বাকারা ২:৩৪
ঈমান দোয়া কবুলের শর্ত সমূহের একটি।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تُبْطِلُواْ صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالأذَى كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاء النَّاسِ
وَلاَ يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ
وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا لاَّ يَقْدِرُونَ عَلَى شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُواْ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত
যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না।
মাদার তেরেসা (Mother Teresa) জান্নাতে যাবে কি ?
অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো,
অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে।
আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। সুরা বাকারা ২:২৬৪
সুতরাং আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমস্ত বিষয়ের ব্যাপারে আমাদেরকে জানিয়েছেন বা
আল্লাহ তা’আলা সেসব কাজ বা কথা ভালবাসেন তার বাইরে কোন কিছুর মাধ্যমে আমরা তার ইবাদাত করতে পারব না। ইবাদাতের ভিত্তি তিনটি রুকনের উপর স্থাপিত।
এক. আল্লাহ্ তা’আলার জন্য পরিপূর্ণ ভালবাসা পোষণ করা দোয়া কবুলের শর্ত। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلّهِ
وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلّهِ جَمِيعاً وَأَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ
আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে,
যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী।
আর কতইনা উত্তম হ’ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা
শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। সুরা বাকারা ২:১৬৫
কবর যিয়ারতে দোয়া কবুলের শর্ত
দুই. দোয়া কবুলের শর্ত এর একটি পরিপূর্ণ আশা পোষণ করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
أُولَـئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ
وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا
যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য মধ্যস্থ তালাশ করে
যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ। সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৫৭
তিন. আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে ভয় করাও দোয়া কবুলের শর্ত। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِّمَنْ خَافَ عَذَابَ الآخِرَةِ
ذَلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ وَذَلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُودٌ
নিশ্চয় ইহার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন প্রতিটি মানুষের জন্য যে আখেরাতের আযাবকে ভয় করে।
উহা এমন একদিন, যে দিন সব মানুষেই সমবেত হবে, সেদিনটি যে হাযিরের দিন। সুরা হুদ ১১:১০৩
কবর পাকা করা কি গুনাহ? তাহলে রাসুলেরটা কেন?
ইখলাস বিহীন লোক প্রদর্শনকারীর আমল কবুল করেন না বরং তাদের জন্য দুর্ভোগ আর ধ্বংশ রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ
অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর,
الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর;
الَّذِينَ هُمْ يُرَاؤُونَ
যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে।
وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
এবং নিত্য ব্যবহার্য্য বস্তু অন্যকে দেয় না। সুরা মাউন ১০৭:৭
দোয়া কবুলের শর্ত এর মাঝে আরো ইরশাদ হয়েছে :
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء
وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে
এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। সুরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৫
দোয়া কবুলের শর্ত এর ব্যপারে আরো ইরশাদ হয়েছে :
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء
وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন।
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। সুরা নিসা ৪:১১৬
إِن يَدْعُونَ مِن دُونِهِ إِلاَّ إِنَاثًا وَإِن يَدْعُونَ إِلاَّ شَيْطَانًا مَّرِيدًا
তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে। সুরা নিসা ৪:১১৭
মৃত ব্যক্তির জন্য বর্জনীয় ও প্রচলিত বিদআত
আরো ইরশাদ হয়েছে :
يَا أَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَنِ عَصِيًّا
হে আমার পিতা, শয়তানের এবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য। সুরা মারঈয়াম ১৯:৪৪
আরো ইরশাদ হয়েছে :
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? সুরা ইয়া-সীন ৩৬:৬০
আরো ইরশাদ হয়েছে :
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلَائِكَةِ أَهَؤُلَاء إِيَّاكُمْ كَانُوا يَعْبُدُونَ
যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং ফেরেশতাদেরকে বলবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত?
قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِم بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُم بِهِم مُّؤْمِنُونَ
ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র, আমরা আপনার পক্ষে, তাদের পক্ষে নই, বরং তারা জিনদের পূজা করত।
তাদের অধিকাংশই শয়তানে বিশ্বাসী। সুরা সা’বা ৩৪:৪১
দোয়া কবুলের শর্ত সমূহের গুরুত্ব একটি শর্ত সুন্নাত পদ্ধতি পরিত্যাগ করে নিজের ইচ্ছামতো ইবাদতকারীর কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। ইরশাদ হয়েছে :
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيراً
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,
তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। সুরা আহযাব ৩৩:২১
মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয়
উল্লিখিত আয়াত সমূহের আলোকে আমল মকবুল হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। সুতরাং আমল মকবুল হওয়ার জন্য
এর সকল শর্তাবলী সংরক্ষণ করতে হবে। বাহ্যিক ত্রুটি হতে মুক্ত হতে হবে। আভ্যন্তরীণ ত্রুটি তথা কুফর, অহমিকা, নিজের আমলের প্রতি গর্ব লোক দেখানো মনোবৃত্তি প্রভৃতি দোষ থেকে পবিত্র হতে হবে।
কিছু ভ্রান্ত ও বাতিল নামধারী মুসলমান আছে যারা মনে করে তাদের আমলসমূহ সবই গ্রহণযোগ্য আর তাদের গোনাহসমূহ অবশ্যই ক্ষমার যোগ্য।
তওবা দোয়া কবুলের শর্ত ?
তাদের এই ভ্রান্তদাবীর মূল্যেৎপাটন কল্পে বলা যায় যে, মুমিনের সকল আমল মকবুল হওয়া ও সকল বদ আমল ক্ষমার যোগ্য হওয়া অবধারিত নয়।
তবে, অবশ্যই স্মরণযোগ্য যে, কবুল করা আল্লাহর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তিনি কোনো কিছুতে বাধ্য নন। অনুরূপভাবে গুনাহ করার পর তাওবাহ্ শর্ত রক্ষা করে তাওবাহ করলে
আল্লাহপাক তাওবাহ কবুল করবেন। তবে, তাওবাহ কবুল করাও আল্লাহপাকের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কেননা, আল্লাহতায়ালার জন্য কোনো কিছুই বাধ্যতামূলক নয়।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
إِنَّهُ هُوَ يُبْدِئُ وَيُعِيدُ
তিনিই প্রথমবার অস্তিত্ব দান করেন এবং পুনরায় জীবিত করেন।
وَهُوَ الْغَفُورُ الْوَدُودُ
তিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়;
ذُو الْعَرْشِ الْمَجِيدُ
মহান আরশের অধিকারী।
فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيدُ
তিনি যা চান, তাই করেন। সুরা বুরূজ ৮৫:১৬
কবরস্থ করার সুন্নত পদ্ধতি
সুতারাং যে ব্যক্তি সকল শর্ত রক্ষা করে, বিনষ্টকারী সকল দোষ ও ত্রুটি হতে মুক্ত থেকে আমল করে, অতঃপর তা বাতিল করে না দেয়
এবং ঐ অবস্থাতেই দুনিয়া হতে বিদায় হয়, মহান আল্লাহ তায়ালা তার আমলকে ধ্বংস করেবেন না। বরং কবুল করবেন ও সওয়াব দিবেন।
আর যে ব্যক্তি শিরক, কুফর ছাড়া অন্য গোনাহ করে তাওবাহ্্র পূর্বেই মুমিন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে, তার ব্যাপারটি আল্লাহপাকের ইচ্ছাধীন।
তার মর্জিহলে শাস্তি দিবেন, মর্জি হলে ক্ষমা করে দিবেন। তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না।
স্মরণ রাখা দরকার যে, একজন ব্যক্তির মুমিন বা কাফির হওয়া সর্বশেষ অবস্থার ওপর নির্ভর করে। সারা জীবন মুমিন হিসাবে জীবন অতিবাহিত করার পর
মৃত্যুর সময় কুফরী কালেমার ঘোষণা দিলে সে কাফির হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে কুফুরী অবস্থায় জীবন পাত করে শেষ মুহূর্তে ঈমানের
সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে পরপারে পাড়ি জমালে সে মুমিন হিসেবে বিবেচিত হবে।
মাহফিল করার সঠিক তরীকা
وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلاَ تَمُوتُنَّ إَلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য
এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না। সুরা বাকারা ২:১৩২
আল্লাহ আমাদের সকলকে উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস সমূহের আলোকে জীবন গড়ে মুস্তাজাবুদ্ দাওয়াহ হওয়ার তাওফিক দান করুক। আমিন।
