
কবর পাকা করা কি গুনাহ?
কোন আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তি বা বড় কোন বুযুর্গের কবরকে সাজ-সজ্জা করা যেমন ফুল দেওয়া, কবর পাকা করা কি গুনাহ। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যপারে কোন দিক নির্দেশনা আছে কি না তা নিয়ে আমরা জানব। ইনশা-আল্লাহ।
বাংলাদেশ সহ ভিবিন্ন দেশে প্রায় দেখা যায় আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তিদের কবরকে তার ভক্তবৃন্দরা সাজ-সজ্জা করে থাকেন। যেমন ইন্ডিয়াতে আজমীর শরীফ।
আসলে কবরের ওপর ফুলের মালা দিয়ে সাজানো, ফুল ছিটানো, আতরগোলাপ দিয়ে কবরকে সুগন্ধিময় করা বা কবর পাকা করা ইত্যাদি কাজ গুলো করা
এ কথা প্রমাণ করে না যে এই কবরে শায়িত ব্যক্তি বুজুর্গ বা নেককার বা জান্নাতি। কারণ হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী কবর বাসীদের মর্যাদা লাভ হয় তাদের আমলের মাধ্যমে।
কবর পাকা বা সাজ-সজ্জার মাধ্যমে নয়।
حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ، يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِذَا قُبِرَ الْمَيِّتُ
أَوْ قَالَ أَحَدُكُمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ أَسْوَدَانِ أَزْرَقَانِ يُقَالُ لأَحَدِهِمَا الْمُنْكَرُ
وَالآخَرُ النَّكِيرُ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ
فَيَقُولُ مَا كَانَ يَقُولُ هُوَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ . فَيَقُولاَنِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هَذَا
মৃত ব্যক্তির জন্য বর্জনীয় হল কবর পাকা না করা।
ثُمَّ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ ثُمَّ يُنَوَّرُ لَهُ فِيهِ
ثُمَّ يُقَالُ لَهُ نَمْ . فَيَقُولُ أَرْجِعُ إِلَى أَهْلِي فَأُخْبِرُهُمْ فَيَقُولاَنِ نَمْ كَنَوْمَةِ الْعَرُوسِ
الَّذِي لاَ يُوقِظُهُ إِلاَّ أَحَبُّ أَهْلِهِ إِلَيْهِ . حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ
وَإِنْ كَانَ مُنَافِقًا قَالَ سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ فَقُلْتُ مِثْلَهُ لاَ أَدْرِي
فَيَقُولاَنِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ ذَلِكَ . فَيُقَالُ لِلأَرْضِ الْتَئِمِي عَلَيْهِ
فَتَلْتَئِمُ عَلَيْهِ . فَتَخْتَلِفُ فِيهَا أَضْلاَعُهُ فَلاَ يَزَالُ فِيهَا مُعَذَّبًا حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ
আবূ সালামা ইয়াহইয়া ইবনু খালাফ বাসরী (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় তখন দুইজন কৃষ্ণবর্ণের ও নীল চক্ষু বিশিষ্ট ফিরিশতা তার কাছে আসেন, একজনকে বলা হয়
মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয়
‘‘আল-মুনকার’’ আর অপরজনকে বলা হয় ‘‘আন-নাকীর’’। তাঁরা বলেন, এই ব্যক্তি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি বলতে?
সে তখন (দুনিয়াতে) তাঁকে যা বলত ত-ই বলবে যে, ইনি হলেন আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি কোন ইলাহ নেই আল্লাহ্ ছাড়া, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
তার পর তাঁরা বলবেন আমরা জানতাম যে তুমি এই কথা বলবে। এরপর তার কবর সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেওয়া হবে এবং তার জন্যে এটি আলোকিত করে দেওয়া হবে।
এরপর তাকে বলা হবে। তুমি ঘুমিয়ে পড়। ঐ ব্যক্তি বলবে, আমি আমার পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে যেতে চাই যাতে এই খবরটি তাদের দিতে পারি।
তখন ফিরিশতা দুইজন বলবেন, নয়া দুলহার মত তুমি ঘুমিয়ে থাক। যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তি ছাড়া জাগায় না।
অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে তার এই শয্যা থেকে উত্থিত করবেন। আর মৃত্যু ব্যক্তি যদি মুনাফিক হয় তবে সে (ফিরিশতাদের প্রশ্নের উত্তরে) বলবে,
আমি তো জানিনা, তবে লোকদের যা বলতে শুনেছি আমিও তাই বলেছি। ফিরিশতারা বলবে, আমরা জানতাম তুমি এই ধরণেরই কথা বলবে।
এরপর যমীনকে বলা হবে একে চাপ দাও। তখন যমীন তাকে চাপ দিবে। ফলে তার পিঞ্জরাস্থিসমূহ একটার ভিতর অন্যটা ঢুকে পড়বে।
এভাবে সে আযাব ভোগ করতে থাকবে, অবশেষে তাকে আল্লাহ্ ত’আলা তার এ শয্যা থেকে উত্থিত করবেন।
মিলাদ কিয়াম কি বিদআত ?
আসলে এসব কিছুই করা হয় মাটির উপরে যারা আছেন তাদের সন্তুষ্টির জন্য। মানুষ মনে করেন, তাদের জীবনটা এখানেই, এই দাফন কাফনেই শেষ।
না বিষয়টি এমন নয় বরং মৃত্যুর পরেও একটা জীবন আছে, তাও আবার অনেক লম্বা জীবন, যেখানে অনেক দিন থাকতে হবে, প্রশ্নোত্তর হবে, সুখশান্তির প্রশ্ন আছে।
উলামায়ে কেরামগন কবর পাকা করাকে সাধারণত না জায়েজ বলে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় পূর্ববর্তী বূযুর্গদের কবরগুলো প্রায় সবই পাকা করা।
এমনকি এ ব্যপারে সবচেয়ে বেশি যিনি কঠুর ছিলেন তিনি হলেন হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলবী (রহ.) তার আমলেও অনেক আলেমের কবর পাকা হয়েছে।
এছাড়া হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত মইনুদ্দিন চিশতি (রহ.) সহ অনেক পীর আওলিয়ার কবর পাকা।
আসলে কবর পাকা করা কি গুনাহ এ বিষয়টি জানতে হলে আগে জানতে হবে কবর দেওয়ার সুন্নাত তরীকা কি তাহলে বিষয়টি বুঝা সহজ হবে। ইনশা-আল্লাহ।
কবরস্থ করার সুন্নত পদ্ধতির মধ্যে কবর পাকা নাই।
عَنْ سُهَيْلٍ قَالَ: رَآنِيَ الْحَسَنُ بْنُ الَحسَنِ بْنِ عَلِيّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عِنْدَ الْقَبْرِ
فَنَادَانِي وَهُوَ فِي بَيْتِ فَاطِمَةَ يَتَعَشَّى فَقَالَ: هَلُمَّ إِلَى العِشَاءِ، فَقُلْتُ: لَا أُرِيْدُهُ فَقَالَ:
مَالِي رَأيْتُكَ عِنْدَ الْقَبْرِ؟ فَقُلْتُ: سَلَّمْتُ عَلَى النَّبي ﷺ
فَقَالَ:(إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ فَسَلَّمْ) ثُمَّ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قاَلَ:
(لَا تَتَّخِذُوْا قَبْرِيْ عِيْدًا وَلَا تَتَّخِذُوْا بُيُوْتَكُمْ قُبُوْرًا وَصَلُّوا عَلَيَّ
فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ تُبَلَّغُنِي حَيْثُمَا كُنْتُمْ، لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ اِتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
مَا أَنْتُمْ وَمن بِالْاَنْدَلُس إِلَّا سواء
সুহাইল বলেন, একদা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাতির ছেলে) হাসান বিন হাসান বিন আলী আমাকে কবরের নিকট দেখলেন।
তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। সেই সময় তিনি ফাতেমার বাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি বললেন,
‘এসো খানা খাও।’ আমি বললাম, ‘খাবার ইচ্ছা নেই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার যে, আমি তোমাকে কবরের পাশে দেখলাম?’
আমি বললাম, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দিলাম।’ তিনি বললেন, ‘যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দেবে।’
অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিয়ো না।
তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। তোমরা যেখানেই থাক, সেখান থেকেই আমার উপর দরূদ পাঠ কর।
কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট (ফিরিশতার মাধ্যমে) পৌঁছে যায়। আল্লাহ ইয়াহুদকে অভিশাপ করুন।
কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদা ও নামাযের স্থান) বানিয়ে নিয়েছে। (এ ব্যাপারে এখানে) তোমরা এবং উন্দুলুসের লোকেরা সমান।
মৃত্যুর পর চল্লিশা, মৃত্যুবার্ষিকী পালন
সুতারং বুঝা গেল কারো কবর পাকা বা বাঁধাই করলে বড় কোন ফযীলাত হবে, বা তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হবে এই মর্মে কথাও একটি হাদীস বর্ণিত নাই।
উপরন্তু হাদীসে কবর পাকা করতে নিষেধ করা হয়েছে:
أَخْبَرَنَا هَارُونُ بْنُ إِسْحَاقَ، قَالَ حَدَّثَنَا حَفْصٌ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مُوسَى، وَأَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ
قَالَ : نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُبْنَى عَلَى الْقَبْرِ
أَوْ يُزَادَ عَلَيْهِ، أَوْ يُجَصَّصَ . زَادَ سُلَيْمَانُ بْنُ مُوسَى : أَوْ يُكْتَبَ عَلَيْهِ .
হারুন ইবনু ইসহাক (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে পাকা ঘর নির্মান,
কবরকে বর্ধিতকরণ এবং চুনকাম করা থেকে নিষেধ করেছেন। সুলায়মান ইবনু মুসা (রহঃ)-এর বর্ণনায় একথাটি অতিরিক্ত রয়েছে,
তিনি কবরের উপর লেখা থেকেও নিষেধ করেছেন।
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ، وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ
হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে চুনকাম করতে, কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে
এবং কবরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ
قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ
عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ أَبِي، الْهَيَّاجِ الأَسَدِيِّ قَالَ قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ
أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও যুহারর ইবনু হারব (রহঃ) …… আবূল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, ‘আলী (রাযিঃ) বলেন, আমি কি তোমাকে এমনভাবে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোন (জীবের) প্রতিকৃতি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা ভেঙ্গে দিবে।
পীর বা মাজারে সিজদা করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
এ ছাড়া ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) তার সংকলিত কিতাবুল আসারে উল্লেখ করেছেন:
وَنَكْرَهُ أَنْ يُجَصَّصَ أَوْ يُطَيَّنَ، أَوْ يُجْعَلَ عِنْدَهُ مَسْجِدٌ، أَوْ عَلَمٌ، أَوْ يُكْتَبُ عَلَيْهِ
وَنَكْرَهُ الْآجُرَ أَنْ يُبْنَى بِهِ أَوْ يَدْخُلَ الْقَبْرَ
وَلَا نَرَى بِرَشِّ الْمَاءِ عَلَيْهِ بَأْسًا، وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
আমরা (কবরকে) চুনকাম করা, পাকা করা, অথবা তার নিকটে মসজিদ নির্মাণ করা, ঝান্ডা টানানো, কোনো কিছু লেখা মাকরূহ মনে করি।
এবং আমরা কবরকে ইট দ্বারা পাকা করা, কবরে প্রবেশ করাকে মাকরূহ মনে করি। তবে কবরে পানি ছিটিয়ে দেয়াতে কোন সমস্যা নেই।
এটাই ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর বক্তব্য।
সুতারাং হাদিস ও গ্রহণযোগ্য ফিক্বাহায়ে কেরামগণের কথা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল: কোনো বড় ব্যক্তির কবর পাকা থাকলেই সে কাজ জায়েজ হয়ে যায় না।
তাহলে রাসুলেরটা কেন?
যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর পাকা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর চারিদিক থেকে পাকা। তবে এ পাকা সাহাবায়ে কেরামর রা. এর করা নয়।
এমনটি করতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরং নিষেধ করে গেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তুর্কী খিলাফত যুগে শত্রুদের থেকে কবরে রক্ষিত
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ মুবারককে সুরক্ষিত রাখার জন্য চারিদিকে পাকা করা হয়েছে। বর্তমান সৌদী সরকার এটি ভাঙ্গছে না,
কারণ এতে ফিতনা হবার আশংকা রয়েছে। তাই নবীজীর কবর পাকা হওয়াকে দলীল হিসেবে পেশ করাটা কোনভাবেই যৌক্তিক হবে না। কারণ একাজ নবীজীর আদেশেও করা হয় নি, বা সাহাবাগণের কৃত আমলও নয়।
সেই সাথে সবচেয়ে বড় কথা হলো, যেসব মনীষীদের কবরকে পাকা করা হয়েছে, তারা নিজেরা কি কখনো তাদের পূববর্তী কোনো বুযুর্গের কবরকে পাকা করেছেন?
কিংবা তারা কি তাদের কবরকে পাকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন? তাছাড়া অনেক বুযুর্গানে দ্বীনের কবর ঘিরে প্রচুর পাপকর্ম করা হয়, গাঁজার আসর,
গানের আসর বসানো হয়, বুযুর্গদের কবরের পাশে এসব গোনাহের কাজ করতে কি সেসব বুযুর্গরা আদেশ করে গেছেন? এখন কেউ যদি খাজা মুইনুদ্দীন চিশতী রহ.,
খাজা আব্দুল কাদের জীলানী রহ. সহ অন্য যে সব বুযুর্গদের কবরের পাশে গাঁজা খাওয়া হয় বলা হয়ে থাকে, এমতাবস্থায় এ কথার উপর বিত্ত্বি করে গাঁজা খাওয়াকে জায়েজ ফাতওয়া প্রদান করেন,
তাহলে এ কথাটি কি ঠিক হবে? দেখতে হবে পবিত্র কোরআন ও হাদীস কী বলে? ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ভক্ত মুরিদান বা পরবর্তী ব্যক্তিরা কোনো কাজ করলেই সেটি উক্ত বুযুর্গের কাজ বলে সাব্যস্ত হয় না।
পীরের কাছে সন্তান চাওয়া যাবে
এসব বিষয় শরয়ী দলীলও হয় না। সুতরাং হাদীসের দ্বারা এবং ফিক্বাহায়ে কেরামের মতামত দ্বারা পরিস্কারভাবে প্রমাণিত যে, কবরকে পাকা করা নাজায়েজ।
এখন দেখব এ ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাস্তব আমল কি ছিল? যাতে আমরা সহজে তার উপর আমল করতে পারি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ কখনো কোনো কবর পাকা করেননি বরং তা সর্বদা বর্জন করেছেন এবং নিষেধ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকে মৃত পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক মানুষকে দাফন করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর প্রিয়তম সন্তানগণ, স্ত্রীগণ,
আত্মীয়গণ, তাঁর প্রাণপ্রিয় সাহাবায়ে কেরামের অনেকে। তিনি কারো কবরে কখনো কোনো গম্বুজ তৈরি করেননি, পাকা করেননি,
কোনো প্রকারের চুনকাম বা সৌন্দর্যবর্ধন করে সযত্নে সংরক্ষণ করেননি। সর্বদা তাঁদেরকে গোরস্তানে দাফন করতেন। যদি বিশেষ কোন আপনজন
ও মহব্বতের মানুষ হতেন তাহলে তার কবর চিনতে পারার জন্য তার পাশে পাথর রেখে দিতেন এই সুন্নাতটি এখনও মদিনায় অবস্থিত জান্নাতুল বাকীতে দৃশ্যমান ।
এধরনের একজন মানুষ ছিলেন উসমান ইবনু মাযঊন রা. তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুধ ভাই ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্ব থেকেই ধার্মিক জীবনযাপন করতেন
এবং মদপান করতেন না। সর্বপ্রথম যাঁরা ইসলাম গ্রহন করেন তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।
এরপর তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে তাঁর মৃতদেহের গালে চুমু খেতে থাকেন।
তাঁর চোখের অশ্রুতে মৃতদেহের মুখমন্ডল ভিজে যেতে থাকে। জান্নাতুল বাকীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দাফন করেন।
তকদিরের উপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দেওয়া জায়েজ কি
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ نَجْدَةَ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ سَالِمٍ، ح
وحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ الْفَضْلِ السِّجِسْتَانِيُّ، حَدَّثَنَا حَاتِمٌ يَعْنِي ابْنَ إِسْمَاعِيلَ
بِمَعْنَاهُ عَنْ كَثِيرِ بْنِ زَيْدٍ الْمَدَنِيِّ، عَنِ الْمُطَّلِبِ، قَالَ: لَمَّا مَاتَ عُثْمَانُ بْنُ مَظْعُونٍ
أُخْرِجَ بِجَنَازَتِهِ فَدُفِنَ، فَأَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا أَنْ يَأْتِيَهُ بِحَجَرٍ
فَلَمْ يَسْتَطِعْ حَمْلَهُ، فَقَامَ إِلَيْهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَحَسَرَ عَنْ ذِرَاعَيْهِ، قَالَ كَثِيرٌ:
قَالَ الْمُطَّلِبُ: قَالَ الَّذِي يُخْبِرُنِي ذَلِكَ: عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:
كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ ذِرَاعَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
حِينَ حَسَرَ عَنْهُمَا ثُمَّ حَمَلَهَا فَوَضَعَهَا عِنْدَ رَأْسِهِ
وَقَالَ: أَتَعَلَّمُ بِهَا قَبْرَ أَخِي، وَأَدْفِنُ إِلَيْهِ مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِي
আল-মুত্তালিব (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উসমান ইবনু মাযঊন (রাঃ) মারা গেলে তার লাশ আনা হলো, তারপর লাশ দাফন করা হলো।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তাঁর কাছে একটি পাথর নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিলেন। কিন্তু লোকটি তা বহন করতে অক্ষম হলো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পাথরটির কাছে গেলেন এবং নিজের জামার আস্তিন গোটালেন। বর্ণনাকারী কাসীর (রহঃ) বলেন,
আল-মুত্তালিব বললেন, আমাকে যে ব্যক্তি এ ঘটনা অবহিত করেছেন তিনি বললেন, আমি যেন এখনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর বাহুদ্বয়ের শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি যখন তিনি তাঁর জামার আস্তিন গুটিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি পাথরটি দু’ হাতে তুলে এনে উসমান ইবনু মাযউনের শিয়রে রাখেন।
অতঃপর তিনি বললেনঃ এর দ্বারা আমি আমার ভাইয়ের কবর চিনতে পারবো এবং আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে তার কাছে দাফন করবো।
ধর্ষণ সমস্যা সমাধান
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছা করলে তাঁর প্রিয়তম ভাই, এতবড় বুজুর্গ সাহাবী ও আল্লাহর অন্যতম ওলীর কবরটি বাঁধাতে বা কবরের উপরে একটি বড় ঘর
একটি গেলাফ ও পাশে যিয়ারতের সুবিধার জন্য একটি যিয়ারত ছাউনি তৈরি করতে পারতেন। তিনি তা করলে সাহাবীগণ সর্বান্তকরণে তাঁকে সাহায্য করতেন
এবং নিজেরাও তাঁর এই সুন্নাত অনুসরণ করতেন। হাদিস শরীফ আমরা একটি বিশেষ অধ্যায় পেতাম : কিভাবে পাথর দিয়ে কবরের উপরে ঘর,
ইমারাত বা ঢিপি তৈরি করতে হয়। কিভাবে যিয়ারতের ছাউনি তৈরি করতে হয়। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে বুজুর্গগণের সম্মানের এসকল পথের কোনো পথই শেখালেন না।
তিনি শুধুমাত্র একটি পাথর দিয়ে চিহ্ন রেখেই শেষ করলেন। পাথর রাখার উদ্দেশ্যও তিনি বলে দিলেন : যেন তাঁর ভাইয়ের কবরটি চিনতে পারেন,
পরিবারের অন্য কেউ ইন্তেকাল করলে তাঁর পাশে দাফন করতে পারেন।
এ ছাড়া আবু হাইয়াজ আসাদী বলেন: আলী রা. আমাকে বলেনঃ আমি তোমাকে সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করছি, যে দায়িত্ব দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন।
যত মূুুর্তি -প্রতিকৃতি দেখবে সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবে।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ
قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ
عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ أَبِي، الْهَيَّاجِ الأَسَدِيِّ
قَالَ قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ
সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও যুহারর ইবনু হারব (রহঃ) …… আবূল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, ‘আলী (রাযিঃ) বলেন, আমি কি তোমাকে এমনভাবে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন?
তা হচ্ছে কোন (জীবের) প্রতিকৃতি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা ভেঙ্গে দিবে।
এখন কথা হল মানুষের রীতিনীতি নিয়ে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা যায় মানুষ সাধারণত কাঁচা কবরের প্রতি তেমন কোন আদব বা সম্মান দেখায় না,
তাতে না ফাতিহা পাঠ করে, না শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বরং জনগণ একে পদদলিত করে। কিন্তু যদি পাকা কবর সামনে পড়ে এবং এর উপর গিলাফ ইত্যাদি চড়ানো দেখে,
মনে করে যে এটা কোন বুযুর্গের মাযার হবে। তখন সসম্মানে একে অতিক্রম করে এবং আপনা থেকে মুখে ফাতিহা পাঠ এসে যায়।
মিশকাত শরীফের الدفن অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে জীবীত কালে এবং ইন্তিকালের পর একই রকম সম্মান করা উচিৎ। তাই কবরকে এমন ভাবে চিহ্নিত করা যাতে মানুষ সম্মান করে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উক্ত আলোচনা থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুক। আমিন।
