
ঈমান কি ও কেন? এবং ঈমান কত প্রকার ও কি কি?
এ ব্যপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি: হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: পাচটি জিনিসের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হলো
1. আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দাহ ও রাসূল একথার সাক্ষ্য দেয়া।
2. নামাজ কায়েম করা।
3. যাকাত দেয়া।
4. হজ্জ করা।
5. রমজান মাসের রোজা রাখা।
যতগুলো হাদীসের কিতাব এ পর্যন্ত সংকলিত হয়েছে, তার সবগুলোতেই এই ঘোষণার বাণী স্থান লাভ করেছে বা জায়গা করে নিয়াছে। এই পাঁচটি বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা এবং প্রত্যেক মুসলমালের জন্য ফরজ। একই সাথে প্রথম তিনটির উপর আমল করা সকল মুসলমানের জন্য ফরজ এবং শেষ দু’টি সামর্থ অনুযায়ী আদায় করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কাজ।
পাঁচটি স্তম্ভ হল; কালিমায়ে শাহাদাত। নামাজ। রোযা। যাকাত। হজ্জ্ব।
১. দীন ইসলামের প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে ঈমান।
কালেমা শাহাদাত বলতে মূলত; এখানে বুঝানো হয়েছে কালেমায়ে শাহাদাত মুখে বলা ও অন্তরে বিশ্বাস করা ৷ এই বিশ্বাসকে বলা হয় “‘ঈমান” বা কালেমা শাহাদত হলো:
اَشْهَدُ اَنْ لاَّ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَه’ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه’ وَرَسُوْلُه’
অর্থ; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং তার প্রেরিত রাসূল। অনেক মানুষ এমন আছে যারা মুখে আল্লাহকে মানে কিন্তু রসুলকে মানেনা।
ঈমান কি ও কেন এ ব্যপারে মৌলিক স্বীকৃতি এবং অপরিহার্য আমলসমূহ সম্পাদনের মাধ্যমে ঈমানের পূর্ণতা লাভ করে।
আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ বা উপাস্য নেই এবং হযরত মোহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল; এই দুটি বিশ্বাসের মাধ্যমে ঈমানের ভিত গড়ে ওঠে।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সূরা ফাতিহাতে ইরশাদ করেছেন;
সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য।
তিনি বিশেষ কোনো মানব গোষ্ঠির উপাস্য নন। তিনি সর্বগুণে বিশেষিত, সকল দোষ ত্রুটি হতে মুক্ত ও পবিত্র। সর্ব শক্তিমান নিরাকার এবং সদৃশ বিহীন সত্তা।
যেমন আল কোরআনের সূরা আ’রাফ এ ইরশাদ হয়েছে;
উত্তম নাম সমূহ আল্লাহরই, তোমরা তাকে সেসব নামেই ডাকবে। যারা তার নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করবে। তাদের কৃত কর্মের ফল তাদেরকে দেয়া হবে।
সুতরাং এই উত্তম নাম সমূহ এমন যা সকল শক্তিকে একত্রিত করে। তাই, আল্লাহ পাক একাধারে সকল মানুষের ইলাহ বা উপাস্য।
এবং সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং সর্বশেষ আসমানী কিতাব প্রাপ্ত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করাও অপরিহার্য।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
‘যারা আল্লাহ এবং তার রাসূলগণের ওপর ঈমান আনে এবং তাদের একের সাথে অপরের পার্থক্য করে না তাদেরকেই তিনি পুরস্কার দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াময়। সূরা নীসা।
২. দীন ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে সালাত।
ঈমান কি ও কেন এর আলোচনার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নামাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে বার বার নামাজের তাগিদ পেয়েছেন।
কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি ৮২ বার সালাত শব্দ উল্লেখ করে নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
তাই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজকে ঈমানের পর স্থান দিয়েছেন।
নামাজের গুরুত্ব ও ফায়েদা সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের সামনে অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি হলো-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম:
হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘নামাজ’। বুখারি ও মুসলিম
নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া মুমিন মুসলমানরে ঈমানের দাবি ও ফরজ ইবাদত। নামাজি ব্যক্তিই হলো সফল।
যার সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন প্রিয়নবি হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন:
‘যে ব্যক্তি নামাজের প্রতি যত্নবান থাকে; কেয়ামতের দিন ওই নামাজ তার জন্য নূর হবে এবং হিসেবের সময় নামাজ তার জন্য দলিল হবে এবং নামাজ তার জন্য নাজাতের কারণ হবে।
উল্লেখিত হাদিস বর্ণনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মোল্লা আলি ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এ হাদিস গুলোর মাধ্যমেই আলেমগণ ঈমানের পর নামাজকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করেন।
কেননা নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদাত বা উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ।
নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয়। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতে মোহাম্মদীর উপর ফরজ। আর তা হল:
1. ফজরের নামাজ,
2. যোহরের নামাজ,
3. আসরের নামাজ,
4. মাগরিবের নামাজ,
5. ও এশার নামাজ।
ইবাদত মূলত আনুষ্ঠানিক বিশেষ কর্মের নাম। যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত, জুমা, ঈদ, তাহাজ্জুদ ও নফল হিসাবে প্রতিপালিত হয়। বিশেষ ভাবে সালাতের নির্দেশ পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারাতে প্রদান করা হয়েছে:
‘যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সালাত কায়েম করে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল মুসলিম উম্মাহকে সহিহ তরিকায় সঠিক পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।
ফরজ নামাজ আদায়ের পাশাপাশি নফল নামাজও যেন বেশী বেশী আদায় করতে পারি সে তাওফিক দান করুন।
Leave a Reply