
আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।
কোরআন ও হাদিসের অনেক স্থানে নিয়ামতের বর্ণনা। তার মধ্যে থেকে আজ আমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত নিয়ে আলোচনা করব। ইনশা-আল্লাহ। নেয়ামত শব্দ দিয়ে সর্ব প্রথম কোরআনে যে আয়াত আল্লাহ তায়ালা অবতির্ণ করেছেন তা হল:
صِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡہِمۡ ۬ۙ
غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا الضَّآلِّیۡنَ
তাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন।
যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।
এ হল ‘স্বিরাত্বে মুস্তাক্বীম’ তথা সরল পথের ব্যাখ্যা। অর্থাৎ, সেই সরল পথ হল ঐ পথ, যে পথে চলেছেন এমন লোকেরা যাঁদেরকে তুমি নিয়ামত, অনুগ্রহ ও পুরস্কার দান করেছ।
আর নিয়ামত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত দলটি হল নবী, শহীদ, চরম সত্যবাদী (নবীর সহচর) এবং নেক লোকদের দল। যেমন আল্লাহ সূরা নিসার মধ্যে বলেছেন:
وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَـئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِم
مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاء وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـئِكَ رَفِيقًا
আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে।
তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। সুরা নিসা আয়াত : ৬৯
এই আয়াতে এ কথা বলে দেওয়া হয়েছে যে, পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লোকদের পথ হল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্যের পথ, এ ছাড়া অন্য কোন পথ নয়।
নবী রাসুলগনের পথ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত
এটা আল্লাহর নির্ধারিত পথের প্রথম পরিচয়। এর অর্থ এই যে, আল্লাহর নিকট হতে যে পথ দেখানো হয়েছে, তা অনুসরণ ও অনুকরণ করলে আল্লাহর রহমত ও নিয়ামত অর্জন করা যায়।
দ্বিতীয়তঃ তা এমন কোন পথই নয়, যাহা আজ সম্পূর্ণ নূতনভাবে পেশ করা হচ্ছে- পূর্বে পেশ করা হয় নি। বরং তা অতিশয় আদিম ও চিরন্তন পথ।
মানুষের এই কল্যাণের পথ অনেক পুরাতন, যতখানি পুরাতন হচ্ছে স্বয়ং মানুষ। প্রথম মানুষ হতেই এটা মানুষের সম্মুখে উপস্থাপন করা হয়েছে,
অসংখ্য নবী রাসুল এ পথ প্রচার করেছেন, এটা বাস্তবায়িত করার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহর নিকট হতে অপূর্ব নিয়ামত ও সম্মান লাভের অধিকারী হয়েছেন।
এই নিয়ামত তাঁর পরিচয় প্রকাশ করে। তিনি যে রাববুল আলামীন, তিনি যে বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা- এটা বোঝা যায় তাঁর নিয়ামতরাজির মাধ্যমে।
বিভিন্ন সূরায় আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সচেতন করেছেন তাঁর নেয়ামত সম্পর্কে। মানবের উত্তম আকৃতি, জ্ঞান-বুদ্ধি, সহায়-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি সবকিছুই আল্লাহর দান।
তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন।
এই পৃথিবী ও পৃথিবীর সকল বস্তু মানবের কল্যাণের জন্যই সৃজিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء
فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ
لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَسَخَّرَ لَكُمُ الأَنْهَارَ
তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে
অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন,
যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। সুরা ইবরাহীম আয়াত : ৩২
وَسَخَّر لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَينَ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন।
সুরা ইবরাহীম আয়াত : ৩৩
وَآتَاكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ
وَإِن تَعُدُّواْ نِعْمَتَ اللّهِ لاَ تُحْصُوهَا
إِنَّ الإِنسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ
যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন।
যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না।
নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ। সুরা ইবরাহীম আয়াত : ৩৪
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত, যে আয়াতে আল্লাহ পৃথিবীর সকল বস্তুর কথা বলেছেন
সেখানেও যে ভূমিকা দেননি তা দিয়েছেন রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা বলার সময়।
বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।
যেমন কোরআনে বর্ণিত রয়েছে:
لَقَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَى الْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ
وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِينٍ
আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন।
তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। সুরা ইমরান আয়াত : ১৬৪
পৃথিবীর সব নেয়ামত আল্লাহরই দান, তাঁরই অনুগ্রহ, কিন্তু রাসূলের কথা বলার সময় আল্লাহ বললেন, নিশ্চয়ই ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।
এ কথা এজন্যই বলা হয়েছে, যেন মানুষ আল্লাহর রাসূলের মর্যাদা বোঝে এবং তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে শিরোধার্য মনে করে। কেননা এটি এমন এক নিয়ামত,
যার উপলব্ধি ও মূল্যায়নের দ্বারাই মানুষ সর্বোচ্চ সৌভাগ্য লাভ করে থাকে। তার অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়, জীবন ও জগতের প্রকৃত মূল্য সে অনুধাবন করে
এবং স্রষ্টার সাথে তাঁর সু-সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলে তার জীবন স্বার্থক হয়। যেহেতু মুমিনরাই এই মহা নিয়ামতের প্রকৃত সুফল লাভ করেন
তাই আল্লাহ তাআলা রাসূলের আগমনকে মুমিনদের জন্য অনুগ্রহ বলে উল্লেখ করেছেন।
নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন মাজীদের ব্যাখ্যা উম্মতকে জানিয়েছেন। কোরআনী বিধান শিখিয়েছেন।
কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে, সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান করো।
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ
আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। সুরা বাকারা আয়াত : ৪৩
এখন সালাত ও যাকাতের ব্যবহারিক রূপ আল্লাহর রাসূলই শিক্ষা দিয়েছেন। এভাবে সওম, হজ্ব, তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-দুআ ইত্যাদি।
সকল ইবাদতের পদ্ধতি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে শিখিয়েছেন। সাথে সাথে আরো অনেক বিধানও শিক্ষা দিয়াছেন,
যেগুলো মুহাদ্দিসীনে কেরামের পরিভাষায় সুন্নাত নামে পরিচিত।
মোটকথা, জীবনাদর্শের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই অবদান সম্পর্কে চিন্তা করলে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায়।
তাঁর আবির্ভাব মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত ছিল। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত এর মূল্যায়ন ও শোকরগোযার হওয়ার তাওফিক দান করুক। আমিন।